মূলতঃ আল্লাহর যমীনের সর্বত্রই মসজিদ। কিন্তু আলোচ্য অধ্যায়ে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্মিত ঘরকেই মসজিদ বলা হয়েছে। মসজিদ আল্লাহর ঘর, মু’মিন বান্দা মাত্রই সে ঘর আবাদকারী ও আল্লাহর প্রতিবেশী। নামাযই একমাত্র ইবাদত, যার ভেতর দিয়ে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ ইবাদত মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতম এবং মানবাত্মার জন্য পরম কল্যাণকর। নামাযের নিয়মিত পদ্ধতির মাধ্যমে মহান স্রষ্টার নিকট মানুষের চরম বিনয়, নম্রতা ও আত্মসমর্পণের ভাব পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ পায়। এ জন্যই ‘সালাত’ শব্দটি বিনয়, নম্রতা, দু’আর অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা’আলার অশেষ দয়া ও করুণা লাভের পক্ষে যাবতীয় ইবাদতের মধ্যে নামায সর্বাধিক কার্যকরী।
নামায আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে, ফরয নামায যথাসময়ে আদায়কারীকে বেহেশত দানে তিনি ওয়াদাবন্ধ। আর নফল নামাযও ফরযের পরিপূরক হিসেবে তার কাছে বেশি প্রিয়। নামায অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় ইবাদত। যথাসময়ে ফরয নামায আদায় করতে না পারলে তা কাযা করতে হয় কিন্তু হেলায় বাদ দেওয়া চলবে না। রাত্রি জাগরণ ও নফল নামাযের মাধ্যমে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা’আলা তা কবুল করেন। শেষ রাত্রি নফল নাময (তাহাজ্জুদ নামায) ও প্রার্থনার সর্বোত্তম সময়।
মসজিদ ও নামায সম্পর্কিত হাদীসে কুদসীসমূহ ঃ
১. তোমরা যখন কোন ব্যক্তিকে মসজিদ সমূহের বরাবর গমন করতে দেখ, তখন তাকে মু’মিন বলে সাক্ষ্য দিতে কৃপণতা প্রকাশ করো না। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে যে আল্লাহর মসজিদ আবাদ করে। হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু সাঈদ (রা)-এর সূত্রে নকল করেছেন।
২. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শেষ বিচারের দিন উচ্চ আওয়াজে ডাকতে থাকবেন, “আমার প্রতিবেশী কোথায়” “আমার প্রতিবেশী কোথায়?” তখন ফেরেশতাগণ আরয করবে, “হে আমার প্রতিপালক আপনার প্রতিবেশী হওয়া কার পক্ষে সম্ভব?” জবাবে তিনি বলবেন, “মসজিদসমূহ আবাদকারীগণ কোথায়?” ইবনুন-নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্র বর্ণনা করেছেন।
৩. কোন মুয়াযযিন যখন আযান দিতে শুরু করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তার মাথার উপর তাঁর (কুদরতী) হাত রাখেন, তিনি হাত স্থির রাখেন, যে পর্যন্ত সে আযান থেকে অবসর গ্রহণ না করে। আর নিশ্চয়ই তিনি তার কন্ঠস্বর বিস্তারের দূরত্ব পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেন- তারপর যখন যে আযান শেষ করে অবসর গ্রহণ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আমার বান্দা! তুমি সত্য বলেছ এবং তুমি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছ। সুতরাং তুমি শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে নকল করেছেন।
৪. তোমার প্রতিপালক যে বকরীর রাখালের প্রতি খুব সন্তুষ্ট, যে কোন পাহাড়ের চূড়ায় বকরী চরায়, নামাযের জন্য আযান দেয় এবং নামায আদায় করে। অতঃপর মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ বলেন, “তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, যে আযান দেয় নামায আদায় করে ও আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশের অধিকার দিলাম।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা উকবা ইবনে আমের (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “(হে মুহাম্মদ)! আমি তোমার উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি। আর আমি নিজেই এ প্রতিশ্র“তি দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি এ পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাসময়ে যত্নসহকারে আদায় করবে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি তা হিফাযত করবে না, তার জন্য আমার কোন প্রতিশ্র“তি নেই।” ইবনু মাজাহ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু কাতাদা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৬. রসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহান ও বরকতময় আল্লাহর নিকট থেকে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট আগমন করলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ বলেন, “আমি নিশ্চয়ই তোমার উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি। যে ব্যক্তি ঐগুলোর জন্য অযু সহকারে, নির্দিষ্ট সময়ে, তাদের রুকু ও সিজদা সহকারে সম্পূর্ণরূপে আদায় করে, নিশ্চয় তার জন্য আমার নিকট এগুলোর পরিবর্তে এ প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, আমি তার বিনিময়ে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি তার ব্যতিক্রম করে সাক্ষাত করবে তার স্বপক্ষে আমার কোন অঙ্গীকার নেই। আমি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারি, আর ইচ্ছা করলে তার প্রতি করুণাও করতে পারি।”
আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ দাউদ তায়ালিসী উবাদা ইবনে সামিত (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৭. শেষ বিচার দিবসে বান্দার নিকট থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়ে হিসাব নেয়া হবে তা হলো তার নামায। যদি সে তা পূর্ণ মাত্রায় আদায় করে থাকে তবে তাকে পূর্ণ লেখা হবে। আর যদি সে তা পূর্ণ না করে থাকে, তাহলে মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা, যা দ্বারা তোমরা তার ফরয পূর্ণ করে নিতে পার। অতঃপর যাকাত বিষয়ে অনুরূপভাবে হিসাব নেয়া হবে। অতঃপর তার সমুদয় আমলের হিসাব অনুরূপভাবে নেয়া হবে। ইমাম আহমদ ও আবূ দাঊদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত তামীমদারী ও ইবনে আমি শায়বা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[আলোচ্য হাদীস স্পষ্ট প্রমাণ করে যে শেষ বিচারের দিবসে নফল নামায আল্লাহর দরবারে ফরযের অন্তর্ভূক্ত হবে।]
৮. নিশ্চয়ই যখন কোন বান্দা নামাযে দন্ডায়তমান হয় তখন সে করুণাময় আল্লাহর (কুদরতী) চোখের সামনে অবস্থান করে। অতঃপর যখন যে এদিক-সেদিক তাকায় তখন আল্লাহ তাকে বলেন, “হে বনী আদম! তুমি কার প্রতি দৃষ্টিপাত কর? তোমার জন্য সে কি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর? হে বনী আদম! তুমি তোমার নামাযে লিপ্ত হও, কারণ তুমি যার দিকে দৃষ্টিপাত করতে উদ্যত, আমি তোমার জন্য তার চেয়ে উত্তম।” উকইলী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৯. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ বলেছেন, “আমার কোন বান্দা আমার নিকট প্রিয় হয় না অন্য কোন প্রিয়বস্তু দ্বারা, যতক্ষণ সে আমি তার ওপর ফরয করেছি, তা সমাধা না করে।” খাতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১০. মহান ও বরকতময় আমার প্রতিপালক, সে রাত্রে তাঁর শ্রেষ্ঠতম আকৃতিতে আমার নিকট আগমন করলেন। তিন স্বপ্নে বললেন, “হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি জানেন উর্ধ্বতম জগতের ফেরেশতা প্রধানগণ কি বিষয়ে ঝগড়া করতেছে?” আমি বললাম, ‘না’। অতঃপর তিনি আমার দুই কাঁধের মাঝখানে তাঁর হাত রাখলেন। এমনকি এর শীতলতা আমি আমার বুকের (উভয় স্তনের) মাঝখানে অনুভব করলাম। তারপর আকাশের যাবতীয় বস্তু চিনলাম, তারপর তিনি (পুনরায়) জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি জানেন উর্ধ্বতম জগতের ফেরেশতা প্রধানগণ কি ব্যাপারে ঝগড়া করতেছে?” জবাবে আমি বললাম, “হ্যাঁ, পাপ মোচনকারী ও পদমর্যাদা বর্ধনকারী আমলের বিষয়ে। পাপ মোচনকারী আমল হলো নামায আদায়ের পর মসজিদে বসে অপেক্ষা করা, জামায়াতে যোগ দেওয়ার জন্য পদব্রজে হেঁটে যাওয়া, কষ্ট হওয়া সত্তে¡ও ভালভাবে ওযু করা।” আল্লাহ বললেন, “হে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সত্য বলেছেন। যে ব্যক্তি এসব করে সে কল্যাণের সাথে জীবন যাপন করে এবং কল্যাণের সাথে মৃত্যুবরণ করে। আর তার কৃত পাপ থেকে পবিত্র হয়ে যায় সে দিনের মত, যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছেন।” আর তিনি বললেন, “হে মুহাম্মদ! যখন আপনি নামায আদায় করেন তখন বলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটি থেকে ভাল কাজ সম্পন্ন করার তৌফিক, মন্দ কাজ ত্যাগ করার শক্তি ও মিসকীনদের প্রতি ভালবাসা প্রার্থনা করি। আর পাশাপাশি কামনা করি আপনি আমাকে ক্ষমা করেন এবং আমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করুন, আমার তওবা গ্রহণ করুন। সে সাথে আরও বলুন, (হে প্রভু!) যখন আপনি আপনার বান্দাগণকে পরীক্ষা করতে চান, তখন আমাকে অপরীক্ষিত অবস্থায় আপনার নিকট গ্রহণ করে নেন (মৃত্যু দিন)।” তিনি আরও বলেছেন, পদমর্যাদা বর্ধনকারী কাজ হলো প্রকাশ্যভাবে সালাম করা, ক্ষুধার্তকে আহার্য দান করা এবং রাত্রে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায আদায় করা।
আবদুর রাযযাক ও আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১১. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে আদম সন্তান! দিনের প্রথমাংশে চার রাকাত নামায আদায়ে অক্ষম হইও না, এর শেষে আমি তোমাকে যথেষ্ট সাহায্য করব।” তিবরানী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবুদ দারদা (রা)-এর সূত্রে নকল করেছেন।
১২. আমাদের প্রতিপালক দুই ব্যক্তির ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন, তাদের এক ব্যক্তি, যে রাত্রে তার পছন্দনীয় স্ত্রী, শিশু এবং নরম বিছানা ও লেপ ছেড়ে আমার নামাযের জন্য উঠে আসে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর ফেরেশতাগণকে ডেকে বলেন, “তোমরা লক্ষ্য কর, যে তার স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে, কোমল বিছানা ও লেপ থেকে নামাযের জন্য উঠে এসেছে শুধুমাত্র আমার নিকট যে প্রতিদান রয়েছে তার জন্য আগ্রহান্বিত হয়ে এবং আমার নিকট যে শাস্তি রয়েছে তার ভয়ে।” দ্বিতীয় ব্যক্তি সেই, যে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারপর পরাস্ত হয়ে পলায়ন করেছে। অতঃপর পলায়ন করার শাস্তি বুঝতে পেরেছে। তারপরও পুনরায় যুদ্ধে ফিরে এসেছে এমনকি শত্রু কর্তৃক তার রক্ত ক্ষরিত হয়েছে। তখন আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাগণকে বলেন, “তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, সে আমার নিকট যে প্রতিদান রয়েছে তার আগ্রহে এবং আমার নিকট যে শাস্তি রয়েছে তার ভয়ে পুনরায় যুদ্ধে ফিরে এসেছে। এমনকি তার রক্ত ক্ষরিত হয়েছে।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৩. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তিনটি বস্তু আছে যে ব্যক্তি এর সংরক্ষণ করে সে আমার প্রকৃত বন্ধু। আর যে ঐগুলো নষ্ট করে সে আমার শত্র“। তিনটি বস্তু হলো- নামায, সাওম ও স্ত্রী সহবাসের পর গোসল। ইবনুন নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে নকল করেছেন।
১৪. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি সে ব্যক্তির নামায গ্রহণ করি, যে আমার মহত্তে¡র নিকট বিনয়ে নত হয়, আর আমার সৃষ্টির নিকট গর্ব করে বেড়ায় না, আমার স্মরণে দিনাতিপাত করে এবং নিজের অপরাধে অবিরত বাড়াবাড়ি করে রাত্রি যাপন করে না। সে ক্ষুধার্তকে খাবার দান করে, অতিথিকে আশ্রয় দান করে, ছোটকে আদর করে এবং বড়কে সম্মান করে। অতঃপর এই সে ব্যক্তি, যে আমার নিকট কোন কিছু চাইলে আমি তাকে দান করি, আর আমার নিকট দু’’আ করলে আমি তার দু’’আ কবুল করি। আর সে আমার নিকট কাকুতি-মিনতি করলে আমি তার প্রতি করুণা বর্ষণ করি। তার দৃষ্টান্ত আমার নিকট জান্নাতসমূহের মধ্যে ফিরদাউসের অনুরূপ, যার ফলসমূহ পচে বিনষ্ট হয় না এবং যার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে।” ইমাম দারু কুতনী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৫. তোমাদের ওপর কতিপয় গিরা বা বাঁধ রয়েছে, অতঃপর যখন কেহ অযুতে তার হাত ধৌত করে তখন একটি গিরা খুলে যায়, আর যখন সে তার মুখ ধৌত করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়, আর যখন সে তার উভয় পা ধৌত করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আড়াল থেকে বলেন, “আমার এ বান্দার প্রতি তোমরা লক্ষ্য কর, সে তার নিজের আত্মার চিকিৎসা করতেছে, সে যা ইচ্ছা তাই আমার নিকট চাইতে পারে। আমার বান্দা যা কিছু আমার নিকট প্রার্থনা করে তাই তার জন্য রয়েছে।” তিবরানী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত উকবা ইবনে আমের (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৬. রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতাদ্বয় কোন ব্যক্তির নামাযের সাথে যুক্ত নামায আল্লাহর নিকট উঠিয়ে নিয়ে যায় না, বরং মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদেরকে সাক্ষ্য রাখতেছি যে, আমি আমার বান্দার উভয় নামাযের মধ্যবর্তী পাপ ক্ষমা করে দিয়েছি।” ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[নামাযের সাথে নামাযের যুক্ত করার অর্থ, এক ওয়াক্ত নামায আদায় করে অন্য ওয়াক্তের অপেক্ষায় থাকা এবং সময় আসলেই তা আদায় করা।]
১৭. যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায়, তার কর্তব্য হলো- যখন সে তা স্মরণ করবে তখনই তা আদায় করবে। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার স্মরণের উদ্দেশ্যে নামায প্রতিষ্ঠা কর।” ইমাম মুসলিম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৮. যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, “কে আছে, যে আমার নিকট দু’আ করে যেন আমি তার দু’আ কবুল করতে পারি? কে আছে, যে আমার নিকট ক্ষমা চায় যেন আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি? কে আছে, যে আমার নিকট বিপদ দূর করবার জন্য প্রার্থনা করে, যেন আমি তার বিপদ দূর করতে পারি? কে আছে ?” (আলাহ এরূপ বলতে থাকেন) যে পর্যন্ত না সকাল হয়। ইবনুন নাজ্জার আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৯. যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন বরকতময় আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কে সে ব্যক্তি, যে বিপদ দূরীকরণ আশা করে যেন আমি তার বিপদ দূর করতে পারি? কে সেই ব্যক্তি, যে আমার নিকট রিযিক চায় যেন আমি তাকে রিযিক দিতে পারি? কে সে ব্যক্তি, যে আমার নিকট চায় যেন আমি তাকে দিতে পারি।” হযরত আবূ দাউদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২০. রসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যদি আমি এটা আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম তবে নিশ্চয়ই আমি ইশার নামায রাতের এক-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেকের পরে সরিয়ে দিতাম। কারণ, যখন রাত্রির অর্ধেক সময় অতিক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ার নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন,“কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যেন আমি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি? কোন তওবাকারী আছে কি, যেন আমি তার তওবা কবুল করতে পারি? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি, যেন আমি তার প্রার্থনা কবুল করতে পারি?” যে পর্যন্ত না ফজরের উদয় হয় (ততক্ষণ এরূপ আহবান চলতে থাকে) ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২১. মহান ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ) প্রতি রাত্রে নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন। কারণ যখন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন তিনি বলেন, “কে আমাকে ডাকবে, যেন আমি তার ডাকে সাড়া দিতে পানি? কে আমার নিকট চাবে, যেন আমি তাকে প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? কে আমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করবে, যেন আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি?” ইমাম মালিক ও শায়খাইন আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২২. তোমরা কি জান তোমার প্রভু কি বলেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নফল নামায এর নির্ধারিত সময়ে আদায় করে, এর সংরক্ষণ করে, আর এর দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে নষ্ট করে না, তার স্বপক্ষে আমার ওপর দায়িত্ব কর্তব্য এই যে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি এ সকল নামায এগুলোর সময়মত আদায় করে না, তাদের সংরক্ষণ করে না, আর তাদের হক উপেক্ষা করে তা নষ্ট করে দেয়, তার অনুকূলে আমার কোন অঙ্গীকার নেই। যদি আমি ইচ্ছা করি তাকে শাস্তি দিতে পারি, আর যদি ইচ্ছা করি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি। তাবরাণী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত কা’ব ইবনে উজরা (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২৩. হিফাযতকারী ফেরেশতাদ্বয়ের মধ্যে এমন কেহ নেই, যে আল্লাহর নিকট যত্নসহকারে যা রেখেছে, তা উঠায়ে নিয়ে যায়, তারপর তার প্রথম পৃষ্ঠায় লিখিত সাওয়াব দেখে এবং শেষের পৃষ্ঠায় লিখিত সাওয়াব দেখে এবং আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাগণকে বলেন, “তোমরা সাক্ষী থাক। আমি আমার বান্দাকে উভয় পৃষ্ঠার মধ্যবর্তী যারা কিছু ত্রুটি রয়েছে, সব ক্ষমা করে দিয়েছি।” আবূ ইয়ালা আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply